ওজন কমানোর উপায় নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে এবং এর মধ্যে অ্যাপল সিডার ভিনেগার (Apple Cider Vinegar) একটি জনপ্রিয় উপাদান। বিভিন্ন ধরণের গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্য বলছে যে, এই প্রাকৃতিক উপাদানটি ওজন কমাতে বেশ কার্যকরী হতে পারে। তবে শুধু অ্যাপল সিডার ভিনেগার ব্যবহার করলেই ওজন কমানো সম্ভব নয়, বরং সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনধারার সঙ্গে একে একীভূত করে ব্যবহার করা উচিত। এখানে অ্যাপল সিডার ভিনেগারের মাধ্যমে ওজন কমানোর বৈজ্ঞানিক ভিত্তি ও কার্যকারিতা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হবে।
Apple Cider Vinegar কী এবং এটি কীভাবে তৈরি হয়?
Apple Cider Vinegar (ACV) হলো আপেল থেকে তৈরি হওয়া এক ধরনের ভিনেগার, যা প্রাকৃতিক ফার্মেন্টেশনের মাধ্যমে প্রস্তুত হয়। আপেল প্রথমে চূর্ণ করে অ্যালকোহলে পরিণত হয় এবং এরপর ব্যাকটেরিয়া সেই অ্যালকোহলকে অ্যাসিটিক অ্যাসিডে রূপান্তরিত করে। অ্যাসিটিক অ্যাসিডই মূলত অ্যাপল সিডার ভিনেগারের সক্রিয় উপাদান, যা ওজন কমানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই ভিনেগারে বিভিন্ন খনিজ উপাদানও থাকে, যা শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্রম বজায় রাখতে সহায়ক।
অ্যাপল সিডার ভিনেগার শুধুমাত্র ওজন কমানোতেই নয়, এটি আরও নানা স্বাস্থ্যের উপকারে লাগে। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, ক্ষুধা কমায়, এবং শরীরের বিপাকীয় কার্যক্রমকে উন্নত করে। অ্যাপল সিডার ভিনেগার শরীরে প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে, যা ওজন কমানোর প্রক্রিয়ায় সহায়ক হতে পারে। তবে, এটি এককভাবে একটি ওজন কমানোর ম্যাজিক পানীয় নয়; সঠিক জীবনধারা ও খাদ্যাভ্যাসের সাথে একে একীভূত করে ব্যবহার করলে এর উপকারিতা পাওয়া যায়।
১. অ্যাসিটিক অ্যাসিড: ওজন কমানোর মূল উপাদান
অ্যাপল সিডার ভিনেগারের প্রধান সক্রিয় উপাদান হলো অ্যাসিটিক অ্যাসিড। এই অ্যাসিডটি শরীরের বিভিন্ন প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে ওজন কমাতে সাহায্য করে। অ্যাসিটিক অ্যাসিড খাদ্য থেকে শর্করাকে ভাঙতে সাহায্য করে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। এটি শরীরে ইনসুলিন সংবেদনশীলতাও বাড়িয়ে তোলে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা হ্রাস করে এবং শরীরে চর্বি জমার প্রবণতা কমায়। এই প্রক্রিয়াগুলো ওজন কমানোর জন্য অত্যন্ত কার্যকরী হতে পারে।
অ্যাসিটিক অ্যাসিড শরীরের বিপাকীয় হারও বাড়াতে পারে। এটি খাদ্যের বিপাক প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে, যার ফলে শরীরের ক্যালোরি পোড়ানোর হার বাড়ে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমা প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়। অ্যাসিটিক অ্যাসিডের উপস্থিতি শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি শোষণের হারও বাড়ায়, ফলে খাবার থেকে প্রয়োজনীয় শক্তি পাওয়া যায় এবং অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার ইচ্ছা কমে যায়।
![]() |
Acetic Acid's Role in Weight Loss |
এছাড়াও, অ্যাসিটিক অ্যাসিড শরীরে ফ্যাটের সঞ্চয় কমিয়ে দেয়। এটি শরীরে থাকা ফ্যাট কোষগুলোর সংখ্যা হ্রাস করতে সহায়ক এবং নতুন ফ্যাট কোষ তৈরির সম্ভাবনাও কমিয়ে দেয়। ফলে, শরীরে চর্বি জমার প্রবণতা হ্রাস পায় এবং দীর্ঘমেয়াদে ওজন কমানো সহজ হয়। তাই অ্যাসিটিক অ্যাসিডই অ্যাপল সিডার ভিনেগারের মূল উপাদান, যা ওজন কমাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
২. ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে অ্যাপল সিডার ভিনেগার
অ্যাপল সিডার ভিনেগার ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম, যা ওজন কমানোর ক্ষেত্রে একটি বড় ভূমিকা পালন করে। অনেক সময় আমরা বেশি খেয়ে ফেলি, যা অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণের কারণ হয়। কিন্তু অ্যাপল সিডার ভিনেগার খেলে পেট ভরা থাকার অনুভূতি বাড়ে, ফলে অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার ইচ্ছা কমে যায়। এটি পেট ফাঁপা হওয়া এবং বদহজমের সমস্যাও কমাতে সাহায্য করে, যা খাদ্য হজমে সহায়ক হয়।
বিজ্ঞান বলছে, অ্যাপল সিডার ভিনেগার ক্ষুধা দমনের পাশাপাশি বিপাকীয় কার্যকলাপও উন্নত করতে পারে। ভিনেগার খাওয়ার পর শরীরে অ্যাসিটিক অ্যাসিড ক্ষুধার হরমোনগুলোর কার্যকলাপকে প্রভাবিত করে, যা ক্ষুধা কমায়। এই প্রক্রিয়াটি খাদ্য গ্রহণের পর শরীরের প্রয়োজনীয় ক্যালোরি গ্রহণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে এবং ওজন কমাতে সহায়ক হয়।
![]() |
Apple Cider Vinegar for Appetite Control |
এছাড়াও, অ্যাপল সিডার ভিনেগার খাবারের পর রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে সহায়ক হয়, যা ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। রক্তে শর্করার মাত্রা কমলে ক্ষুধার অনুভূতি কমে যায় এবং আমরা বেশি খাবার খাওয়ার প্রয়োজন অনুভব করি না। ফলে, দিনে কম ক্যালোরি গ্রহণের মাধ্যমে ওজন কমানোর প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়।
৩. বিপাকীয় হার বৃদ্ধি
বিপাকীয় হার হল সেই প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে আমাদের শরীর খাদ্যকে শক্তিতে রূপান্তরিত করে। যত বেশি বিপাকীয় হার হবে, তত বেশি ক্যালোরি আমরা পোড়াতে পারব। অ্যাপল সিডার ভিনেগার বিপাকীয় হার বাড়াতে সাহায্য করে, যা ওজন কমানোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতে থাকা অ্যাসিটিক অ্যাসিড শরীরে ক্যালোরি পোড়ানোর হার বৃদ্ধি করে এবং নতুন ফ্যাট কোষ তৈরি প্রতিরোধ করে।
অ্যাপল সিডার ভিনেগার শরীরের ফ্যাটকে ভাঙতে সহায়ক, যা আমাদের বিপাকের গতি বাড়ায়। যখন আমাদের শরীরে অধিক ফ্যাট ভেঙে যায়, তখন ওজন কমার প্রক্রিয়া দ্রুত হয়। এছাড়া এটি শরীরের বিপাক প্রক্রিয়াকে উন্নত করে, যা খাদ্য থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি শোষণের পাশাপাশি ফ্যাট জমা প্রতিরোধ করে।
![]() |
Boosting Metabolism with Apple Cider Vinegar |
বিপাকীয় হার বাড়াতে অ্যাপল সিডার ভিনেগারের প্রতিদিনের সেবন কার্যকর হতে পারে। এটি বিশেষত তখন কার্যকর যখন সঠিক ডায়েট এবং ব্যায়ামের সঙ্গে এর ব্যবহার করা হয়। নিয়মিতভাবে অ্যাপল সিডার ভিনেগার সেবন করলে শরীরে অতিরিক্ত ফ্যাট জমার সম্ভাবনা কমে যায় এবং শরীরের ওজন কমার প্রক্রিয়া সহজ হয়।
৪. রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণ
ওজন কমানোর ক্ষেত্রে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রক্তে অতিরিক্ত শর্করা শরীরে চর্বি জমাতে সহায়ক হয়, যা ওজন বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। অ্যাপল সিডার ভিনেগার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়ক, যা ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়িয়ে খাবার গ্রহণের পর রক্তে শর্করার মাত্রা কমিয়ে রাখে। বিশেষ করে যারা ডায়াবেটিস বা প্রিডায়াবেটিসে ভুগছেন, তাদের জন্য এটি অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে।
অ্যাপল সিডার ভিনেগার শরীরে গ্লুকোজ গ্রহণের হার কমিয়ে দেয়, যা রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সহায়ক। এটি ইনসুলিনের কার্যকারিতাও বাড়ায়, ফলে খাবারের পর রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়ে না। এই প্রক্রিয়ায় শরীরে চর্বি জমা প্রতিরোধ করা যায়, যা ওজন কমানোর প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে।
![]() |
Blood Sugar Control with Apple Cider Vinegar |
এছাড়াও, নিয়মিতভাবে অ্যাপল সিডার ভিনেগার সেবন করলে রক্তে শর্করার স্থিতিশীলতা বজায় থাকে, যা ক্ষুধা কমায় এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। সঠিক খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে একে মিশিয়ে সেবন করলে এর উপকারিতা দ্বিগুণ হয় এবং দ্রুত ওজন কমাতে সাহায্য করে।
৫. ফ্যাট জমা কমানো
অ্যাপল সিডার ভিনেগার শরীরে ফ্যাট জমা কমাতে সাহায্য করে। এতে থাকা অ্যাসিটিক অ্যাসিড ফ্যাট কোষ ভাঙতে সহায়ক এবং শরীরে নতুন করে ফ্যাট জমা হওয়া প্রতিরোধ করে। বিশেষত পেটের চারপাশের ফ্যাট কমানোর জন্য এটি কার্যকর হতে পারে, যা সাধারণত ওজন কমানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে কঠিন।
ফ্যাট জমা প্রতিরোধ করতে অ্যাসিটিক অ্যাসিড শরীরে ফ্যাটের বিপাক প্রক্রিয়াকে উন্নত করে। এটি ফ্যাট কোষগুলোকে ভেঙে ক্যালোরিতে রূপান্তরিত করতে সহায়ক, যা শরীর থেকে ফ্যাট কমাতে সহায়ক। এছাড়া এটি শরীরের চর্বি জমার হরমোনগুলোকেও প্রভাবিত করে, ফলে শরীরে চর্বি জমার সম্ভাবনা হ্রাস পায়।
![]() |
Reducing Fat Accumulation with Apple Cider Vinegar |
নিয়মিতভাবে অ্যাপল সিডার ভিনেগার সেবন করলে শরীরের পেটের চর্বি দ্রুত হ্রাস পেতে শুরু করে। এটি খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে এবং নিয়মিত ব্যায়াম করলে দ্রুত ফলাফল পাওয়া সম্ভব। দীর্ঘমেয়াদে এটি ফ্যাট জমার সমস্যা থেকে মুক্তি দেয় এবং ওজন কমাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
৬. হজমের উন্নতি
অ্যাপল সিডার ভিনেগার হজমের প্রক্রিয়াকে উন্নত করতে সহায়ক। এটি শরীরে পাচনতন্ত্রের এনজাইমের কার্যকারিতা বাড়িয়ে দেয়, যা হজমকে ত্বরান্বিত করে। অনেক সময় ওজন কমানোর প্রধান কারণ হতে পারে হজমের সমস্যা, যা অ্যাপল সিডার ভিনেগার দ্বারা সমাধান করা সম্ভব।
এই ভিনেগার পাকস্থলীর অ্যাসিডের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, যা খাবার দ্রুত হজম করতে সহায়ক। এটি খাবারকে ভাঙতে এবং শরীর থেকে পুষ্টি শোষণ বাড়াতে সাহায্য করে। হজম উন্নত হলে শরীরে ফ্যাট জমার প্রবণতা কমে এবং পেটের ফোলাভাব বা বদহজমের সমস্যা দূর হয়, যা ওজন কমাতে সহায়ক।
![]() |
Improving Digestion with Apple Cider Vinegar |
হজমের উন্নতিতে অ্যাপল সিডার ভিনেগার নিয়মিত সেবন করা যেতে পারে। এটি খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে বা পানীয় হিসেবে গ্রহণ করলে হজম শক্তি বাড়িয়ে তুলতে পারে এবং পেটের সমস্যা দূর করে ওজন কমাতে সাহায্য করে।
৭. জল ধরে রাখার প্রবণতা কমানো
অ্যাপল সিডার ভিনেগার শরীরের অতিরিক্ত জল ধরে রাখার প্রবণতা কমাতে সাহায্য করে, যা ওজন কমানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। অনেক সময় শরীরে অতিরিক্ত জল জমা হয়, যা ফোলাভাব এবং ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। এই ভিনেগার একটি প্রাকৃতিক ডিউরেটিক হিসেবে কাজ করে, যা শরীর থেকে অতিরিক্ত জল বের করতে সহায়ক।
জল জমার কারণে শরীর ফোলা মনে হয় এবং এর ফলে ওজন বেড়ে যায়। অ্যাপল সিডার ভিনেগার শরীরে জল ধরে রাখার ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণ করে, যা পেটের ফোলাভাব এবং শরীরের অপ্রয়োজনীয় জল বের করতে সহায়ক। এর ফলে শরীরের জলীয় ওজন কমে এবং আমরা হালকা অনুভব করি।
![]() |
Reducing Water Retention and Bloating with Apple Cider Vinegar |
এছাড়া এটি শরীরের ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্য রক্ষা করে, যা শরীরের অতিরিক্ত জল বের করতে সহায়ক। নিয়মিত অ্যাপল সিডার ভিনেগার সেবন করলে শরীরের ফোলাভাব কমে এবং আমরা আরও সুস্থ এবং হালকা অনুভব করি, যা ওজন কমানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
৮. লিভারের কার্যকারিতা উন্নত করা
লিভার আমাদের শরীরের প্রধান অঙ্গগুলোর একটি, যা ফ্যাটের বিপাক এবং বিষাক্ত পদার্থ অপসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অ্যাপল সিডার ভিনেগার লিভারের কার্যকারিতা উন্নত করতে সহায়ক, যা ওজন কমানোর জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। লিভার যখন সঠিকভাবে কাজ করে না, তখন শরীর ফ্যাট জমাতে শুরু করে এবং ওজন বাড়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই লিভারের স্বাস্থ্য বজায় রাখা ওজন কমানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।
অ্যাপল সিডার ভিনেগারে থাকা অ্যাসিটিক অ্যাসিড লিভারের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করতে সহায়ক। এটি লিভারের কোষগুলিকে সক্রিয় করে তোলে, যা শরীরে ফ্যাটের জমা প্রতিরোধ করে এবং লিভারের বিপাকীয় কার্যক্রমকে উন্নত করে। ফলে শরীরে চর্বি জমা কমে যায় এবং লিভার আরও কার্যকরভাবে কাজ করতে শুরু করে। লিভারের কার্যক্ষমতা বাড়লে শরীরে অতিরিক্ত ফ্যাট ভাঙা সহজ হয়, যা ওজন কমাতে সহায়ক।
![]() |
Enhancing Liver Function with Apple Cider Vinegar |
এছাড়াও, অ্যাপল সিডার ভিনেগার লিভারের ডিটক্সিফিকেশন প্রক্রিয়াকে উন্নত করে। এটি শরীরের বিষাক্ত পদার্থ এবং বর্জ্য অপসারণে সহায়ক, যা লিভারের কার্যক্ষমতাকে বজায় রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত অ্যাপল সিডার ভিনেগার সেবন করলে লিভারের কার্যক্ষমতা বাড়ে এবং এটি ফ্যাট ভাঙার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, যা দীর্ঘমেয়াদী ওজন কমাতে সহায়ক।
৯. হজমের জন্য এনজাইমের উৎপাদন বাড়ানো
হজমের জন্য এনজাইমের কার্যকারিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এনজাইম খাদ্যকে ভেঙে শক্তিতে পরিণত করতে সহায়ক। যখন আমাদের শরীরে যথেষ্ট পরিমাণে হজমের এনজাইম থাকে, তখন আমরা সহজে খাদ্য হজম করতে পারি এবং পুষ্টি শোষণ করতে সক্ষম হই। অ্যাপল সিডার ভিনেগার হজমের এনজাইমের উৎপাদন বাড়াতে সহায়ক, যা ওজন কমাতে সহায়ক হতে পারে।
অ্যাপল সিডার ভিনেগার হজম প্রক্রিয়ায় এনজাইমগুলির কার্যকারিতা উন্নত করে, যা খাদ্যকে দ্রুত ভেঙে ফেলে এবং শরীরের পুষ্টি শোষণের ক্ষমতা বাড়ায়। এটি খাদ্যের বিপাককে ত্বরান্বিত করে এবং শরীরে ক্যালোরি পোড়ানোর হার বাড়িয়ে তোলে। এনজাইমের কার্যকারিতা বাড়ানোর মাধ্যমে অ্যাপল সিডার ভিনেগার শরীরে অতিরিক্ত ফ্যাট জমা প্রতিরোধ করে, যা ওজন কমানোর ক্ষেত্রে অত্যন্ত কার্যকর।
![]() |
Promoting Enzyme Production for Better Digestion |
এছাড়াও, অ্যাপল সিডার ভিনেগার খাদ্যের ক্ষুদ্র অণুগুলোকে ভেঙে সহজে হজমযোগ্য করে তোলে। ফলে শরীরে খাবার থেকে পুষ্টি শোষণের হার বেড়ে যায় এবং আমরা দীর্ঘ সময় ধরে পেট ভরা অনুভব করি। এটি ক্ষুধা কমাতে সহায়ক এবং অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণ কমিয়ে ওজন কমাতে সাহায্য করে।
১০. ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া এবং জীবাণু নিয়ন্ত্রণ
অ্যাপল সিডার ভিনেগারের অন্যতম প্রাকৃতিক গুণ হলো এর অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রভাব। এটি শরীরের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া এবং জীবাণু নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়ক, যা আমাদের স্বাস্থ্যের উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। শরীরে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া এবং জীবাণু উপস্থিত থাকলে তা হজম প্রক্রিয়া এবং শরীরের বিপাকীয় কার্যক্রমকে বিঘ্নিত করে। অ্যাপল সিডার ভিনেগার এই ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া এবং জীবাণুকে ধ্বংস করে শরীরের স্বাভাবিক কার্যকলাপ বজায় রাখতে সহায়ক হয়।
অ্যাপল সিডার ভিনেগার পাকস্থলী এবং অন্ত্রে উপস্থিত ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াগুলোকে প্রতিরোধ করতে পারে। এটি একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান হিসেবে কাজ করে, যা শরীরে রোগ-জীবাণু নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হয়। ফলে হজমের প্রক্রিয়া ঠিকঠাকভাবে চলতে পারে এবং শরীরে ফ্যাট জমার প্রবণতা কমে যায়।
![]() |
Fighting Harmful Bacteria with Apple Cider Vinegar's Antibacterial Properties |
এছাড়াও, অ্যাপল সিডার ভিনেগার শরীরের অন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষা করে, যা ওজন নিয়ন্ত্রণের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। শরীরে ক্ষতিকর জীবাণু নিয়ন্ত্রণ করা গেলে হজম প্রক্রিয়া উন্নত হয় এবং আমরা খাবার থেকে পুষ্টি শোষণ করতে পারি। এটি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী এবং ওজন কমানোর যাত্রাকে ত্বরান্বিত করতে সহায়ক।
Apple Cider Vinegar (ACV) ওজন কমানোর ক্ষেত্রে কার্যকর হতে পারে, কারণ এটি ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ, বিপাকীয় হার বৃদ্ধি, রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ এবং ফ্যাট জমা কমাতে সহায়ক। এর মধ্যে উপস্থিত অ্যাসিটিক অ্যাসিড শরীরের চর্বি ভাঙতে সহায়ক এবং নতুন চর্বি জমা প্রতিরোধ করে। এছাড়া এটি হজম উন্নত করে, লিভারের কার্যকারিতা বাড়ায় এবং শরীরের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া নিয়ন্ত্রণ করে।
তবে, অ্যাপল সিডার ভিনেগার একা ওজন কমানোর একমাত্র সমাধান নয়। এটি ওজন কমানোর একটি প্রাকৃতিক সহায়ক হতে পারে, কিন্তু সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম এবং মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সমস্ত উপাদান একসঙ্গে কাজ করলে ওজন কমানোর প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয় এবং আপনি একটি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করতে সক্ষম হন।
Apple Cider Vinegar ও ওজন কমানো: গবেষণায় যা জানা গেছে: মূল কথা
- অ্যাসিটিক অ্যাসিড ফ্যাট ভাঙতে ও জমা কমাতে সহায়ক।
- অ্যাপল সিডার ভিনেগার ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে ওজন কমাতে সহায়ক।
- এটি বিপাকীয় হার বাড়িয়ে ক্যালোরি পোড়ানোর হার বৃদ্ধি করে।
- রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
- ফ্যাট জমা কমিয়ে শরীরে চর্বি জমার সম্ভাবনা কমায়।
- এটি হজমের উন্নতি করে এবং শরীরে ফোলাভাব কমায়।
- অ্যাপল সিডার ভিনেগার লিভারের কার্যকারিতা উন্নত করে ফ্যাট ভাঙতে সহায়ক।
- শরীরের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ও জীবাণু নিয়ন্ত্রণে কার্যকর।
No comments:
Post a Comment